কেন এএমআইই ইঞ্জিনিয়ারিং এ পাশের হার প্রতি ১০০ জনে ১ জন ব্যর্থতার পাল্লা এত ভারী কেন
A.M.I.E. (A DEGREE AWARDED BY THE INSTITUTION OF ENGINEERS, BANGLADESH WHICH IS EQUIVALENT TO B.Sc Engineering) নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন আছে, অনেক কিছু করার ইচ্ছা আছে, আর এএমআইই ডিগ্রী-কে আমার জীবনের একটি ইচ্ছা পূরণের জন্য অনেক বেশি ভালবাশি এই ডিগ্রীটাকে । এএমআইই-তে অনেক অসুবিধা আছে, এই ডিগ্রী অর্জনের পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে যার কিছু সিস্টেমের সৃষ্টি , আর কিছু নিজেদের সৃষ্টি !!!!
নিজেদের সৃষ্ট কিছু প্রতিবন্ধকতা এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো , যাতে শিক্ষার্থীরা সেসকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে পারেঃ
১. প্রথম প্রতিবন্ধকতাঃ পড়াশুনা-থেকে নিজেকে কিছুদিন দূরে সরিয়ে রাখা আবার অল্পকিছু দিনের জন্য মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করা, পুনরায় পড়াশুনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া !!! কোন কাজে সফলতার পূর্বশর্ত হলো, নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেই কাজে লেগে থাকা । আপনার অসুখ হয়েছে , সেটা সারাতে ১ মাস ওষুধ খেতে হবে, এখন আপনি যদি ৩ দিন ওষুধ খেয়ে ৩ দিন রেস্ট নেন, ৩ দিন পর আবার অল্পকিছু দিন ওষুধ খেয়ে আবার কিছু দিন বাদ দেন, ফলাফল কি হবে রোগ কখনই সারবে না ! আমাদের এ এম আই ই লেখাপড়ার ক্ষেত্রেো একই ঘটনা ঘটে । অল্পকিছু দিন পড়াশুনা করার পর অধিকাংশ শিক্ষার্থীই, পড়াশুনা থেকে "অবসর" নেন, আবার কিছুদিন পর যখন মনে হয় পড়তে হবে , তখন আবার অল্প কিছু দিন পড়াশুনা চালিয়ে যান । ধারাবাহিকভাবে পড়াশুনা করা এ এম আই ই কমপ্লিট করার জন্য অনেক বেশি প্রয়োজনীয় ।
২. দ্বিতীয় প্রতিবন্ধকতাঃ অন্যকারো সহযোগিতা নিতে ইতস্তত করা ! এই সমস্যা কিছুটা আর্থিক, কিছুটা মানসিক, কিছুটা পারিপার্শ্বিক । অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে অর্থ খরচ করে প্রাইভেট পড়া বা কোচিং করা কিছুটা অসম্ভব, তখন সমস্যাটা আর্থিক , যখন শিক্ষার্থীরা আর্থিক সামর্থ্য থাকার পরও কারো কাছে প্রাইভেট পড়তে, বা কোন কোচিং এ কোচিং করতে অনীহা প্রকাশ করে , তখন , সেটা সমস্যাটা মানসিক । আর যখন শিক্ষার্থীদের আর্থিক সামর্থ্য থাকার পাশাপাশি মানসিক ইচ্ছা থাকার পরও ভাল শিক্ষক, বা কোচিং না থাকার কারনে প্রস্তুতি নিতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, তখন সমস্যাটা পারিপার্শ্বিক । বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৩,৭১৫ জন এ এম আই ই শিক্ষার্থী আছে যারা এ এম আই ই - তে নিয়মিত শিক্ষার্থী (যারা বছরে কমপক্ষে ১ টি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে, তাদেরকে নিয়মিত শিক্ষার্থী ধরা হয়) । এদের মধ্যে ৫% এর সমস্যা আর্থিক, ৭০% এর সমস্যা মানসিক এবং ২৫% এর সমস্যা পারিপার্শ্বিক !!! সেসকল শিক্ষার্থীর সমস্যা, আর্থিক , তাদের সমস্যা সাময়িক । তাই, এই সাময়িক সমস্যা কাটিয়ে সেই শিক্ষার্থী খুব সহজেই এ এম আই ই কমপ্লিট করতে পারবে । এমন সমস্যার মুখোমুখি কোন শিক্ষার্থী থাকলে, আমি সেই শিক্ষার্থীকে তার এ এম আই ই পাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় গাইডবই"সম্পূর্ণ বিনামুল্যে" পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো । রাজশাহীতে হলে আমি সেই সকল শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থীদেরকে "সম্পূর্ণ বিনামুল্যে" কোচিং করাবো । কিন্তু যে সকল শিক্ষার্থীর সমস্যা, মানসিক , তাদের পক্ষে এ এম আই ই কমপ্লিট করা আগামী ১০ বছরেও সম্ভব নয় । আর পারিপার্শ্বিক সমস্যার মুখোমুখি শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যা , তার নিজেরাই সমাধান করতে পারবে বলে আশা করা যায় ।
৩. তৃতীয় প্রতিবন্ধকতাঃ একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা না করা এবং নিজেরা সংঘবদ্ধ হতে না পারাঃ এ এম আই ই শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ খুবই কম । এবং এ এম আই ই শিক্ষার্থীরা কখনই সংঘবদ্ধ হতে পারে না !!! বুয়েট , রুয়েট , চুয়েট , কুয়েট সহ যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেরা "গ্রুপ স্টাডি" করে , নিজেদের নলেজটাকে অন্যদের সাথে শেয়ার করে, নিজেদের পড়াশুনা সংক্রান্ত সমস্যা, গ্রুপ স্টাডি তে নিজেরাই আলোচনা করতে করতে সমাধান করে । যেকোনো কাজে সফলতার অন্যতম শর্ত হলো, " কার্যকরভাবে অন্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা " । এটি শিক্ষার্থীকে শিখতে হবে, যে, কিভাবে , অন্যের সাথে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করা যায় ।
৪. চতুর্থ প্রতিবন্ধকতাঃ দৃঢ় মানসিকতার অভাব ! যেকোনো কাজে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে , দৃঢ় মানসিকতা অনেক বেশি ভুমিকা রাখে । এ এম আই ই শিক্ষার্থীরা কখনই দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে পড়াশুনা করতে সক্ষম হয় না । "একটি নির্দিষ্ট কোর্স যেভাবেই হোক , এই সেমিস্টার এ পাশ করবেই", এমন মানসিকতা খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীরই আছে । সবার মাঝে "দেখা যাক, কি হয় " এমন মনোভাব ! এই সেমিস্টার এ পাশ করলে করলাম, না হলে সামনের বার আবার পরীক্ষা দিবো , এমন মানসিকতা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে কাজ করে , যা এ এম আই ই পাশ করার ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি প্রতিবন্ধকতা ।
৫. পঞ্চম প্রতিবন্ধকতাঃ অর্থ খরচে অনীহা !!! এ এম আই ই শিক্ষা্থীদের মধ্যে অর্থ খরচে বেশ অনিহা দেখা যায় , সেই সমস্যা এতটাই প্রকট যে, সেটার ফলাফলে তাদের অধুরা এ এম আই ই ডিগ্রী অধুরাই থেকে যায় !!! প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়য়ে EEE তে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি বা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে সবমিলিয়ে কমপক্ষে ৩ লক্ষ্ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয় , ভালো বিশ্ববিদ্যালয় যেমন আহসানউল্লাহ্ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত মান সম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ৫ লক্ষ থেকে সাড়ে ৫ লক্ষের মত খরচ হয় । অনেক শিক্ষার্থী প্রাইভেট ভার্সিটি গুলোতে বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে ডিগ্রী সার্টিফিকেট কিনতে রাজি কিন্তু এ এম আই ই কমপ্লিট করার জন্য ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ করতে রাজি নয় !!! । এ এম আই ই তে ১৬ টি কোর্সে পাশ করার প্রয়োজন হয় , সেক্ষেত্রে যদি প্রত্যেকটি কোর্সের জন্য টিউশন ফি ৩০০০ টাকা করেও দিতে হয় তবু ৪৮ হাজার টাকার বেশি লাগবে না !!! অধিকাংশ শিক্ষার্থী এই পরিমাণ অর্থ খরচ করে কোচিং করতে দ্বিধায় পরে যায় !!! তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়য়ে এক সেমিস্টার এ ৪৫ হাজার টাকা দিতে প্রস্তুত , কিন্তু সম্পূর্ণ এ এম আই ডিগ্রী অ্জনের জন্য , সম পরিমাণ অর্থ খরচ করতে প্রস্তুত নয় !!!
কিছু সমস্যা যেগুলোর জন্য সিস্টেম দায়ী, শিক্ষার্থী নয়, সেগুলো এখানে আলোকপাত করা হলোঃ
@ ১. সুনির্দিষ্ট কোন ক্লাস নাই বিধায় এএমআইই কমপ্লিট করা অনেক কঠিন হয়ে দাড়ায়। সম্পূর্ণ ইংরেজি মিডিয়াম এ পড়াশুনা, নতুন জিনিস, নতুন পদ্ধতি, শিক্ষক ছাড়া, ক্লাস ছাড়া কমপ্লিট করাটা অনেক কঠিন হয়ে দাড়ায়।
@ ২. বিভিন্ন শিক্ষার্থী বিভিন্ন জায়গায় কোচিং করে বা প্রাইভেট পড়ে, কিন্তু মানসম্মত শিক্ষকের প্রচণ্ড অভাব বিধায় প্রস্তুতি নেওয়া অগোছালো থেকে যায়, কোনমতে ৫০-৬০ মার্কের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে পরীক্ষার হলে গিয়ে ২৫-৩০ মার্কের উত্তর করে চলে আসতে বাধ্য হয়।
@ ৩. নির্দিষ্ট কোর্সের উপর নির্ভুল ও মানসম্মত হ্যান্ডনোট এর অভাব এএমআইই কমপ্লিট না করতে পারার সবচেয়ে বড় কারন। একজন চাকুরি জিবির পক্ষে নোট তৈরি করে পড়াশুনা করা যেমন অসম্ভব তেমনি ভাল হ্যান্ড নোট ছাড়া বা ভাল গাইড বই ছাড়া এএমআইই কমপ্লিট করা অসম্ভব ।
@ ৪. এএমআইই-এর সিলেবাস ভিত্তিক লেখা বইয়ের অভাব এএমআইই কমপ্লিট না করতে পারার আরেকটি বড় কারন। ভারতের এএমআইই সিলেবাস এর ভিত্তি করে লেখা বই বাংলাদেশের এএমআইই শিক্ষার্থীরা পড়ে থাকে, তাতে ৪০-৫০ মার্কের প্রশ্নের উত্তর করার মত সামর্থ্য তৈরি হয়, যদি বাংলাদেশের এ এম আই ই এর সিলেবাস অনুযায়ী বই বা গাইড বই থাকতো তাহলে প্রশ্ন কমন পাওয়ার পরিমান তা বাড়ত। পাশের হার এবং ভাল রেজাল্ট এর পরিমানটাও বাড়ত বলেই আমার বিশ্বাস।
@ ৫. কার্যকরভাবে অন্যের সংগে যোগাযোগ করতে পারা সফলতার পূর্বশর্ত, কিন্তু এএমআইই শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ এর অভাব খুবই প্রকট। যারা পাশ করে বের হয়ে যায়, তাদের সাথে তো যোগাযোগ করাটা বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছে চাঁদে যাবার মতই ব্যাপার !!! আর যারা এএমআইই পড়ছেন, তাদের মধ্যে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে একটা অনিহা পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন থেকে কারো সম্পর্কে কোন তথ্য প্রাপ্তি সম্ভব হয়ে ওঠে না। যার ফলে, অতিত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের মধ্যে COMMUNICATION GAP রয়েই যায় যা এএমআইই কমপ্লিট না করতে পারার আরেকটি বড় কারন বলে আমি মনে করি।
@ ৬. এএমআইই কমপ্লিট না করতে পারার আরেকটি কারন হোল, পরিকল্পনাহীন ভাবে পড়াশুনা করা। অধিকাংশ এএমআইই শিক্ষার্থীর –ই তার নিজের পড়াশুনা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা নেই, আর এএমআইই কমপ্লিট না করতে পারার এটা আরেকটি বড় কারন। এএমআইই কমপ্লিট করার জন্য ১৫ বছর সময়সীমা থাকায় অনেকটা পরিকল্পনাহিনতা কাজ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে, কিছুটা গা ছাড়া ভাব !!! যদি এমন হতো, নির্দিষ্ট সংখ্যক বিষয় নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা দিতে হবে, তাহলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়মিতভাবে পড়াশুনা করার মানসিকতা তৈরি হতো, যা এএমআইই কমপ্লিট করার জন্য অপরিহার্য।
@ ৭. অধিকাংশ শিক্ষার্থী এএমআইই কমপ্লিট না করতে পারার আরেকটি কারন হোল এএমআইই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনা-টাকে সিরিয়াসলি না নিয়ে ঢিলেঢালা ভাবে পড়াশুনা করা । পরীক্ষা দিতেই হবে এমন “ন্যূনতম সাবজেক্ট সংখ্যা” নির্দিষ্ট নয় বলে আরামপ্রিয় বাঙালি এএমআইই শিক্ষার্থীরা মেধা থাকা সত্ত্বেও পরিশ্রম করে না।
@ ৮. পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিজের ভুল ভ্রান্তি সংশোধন এবং নিজের প্রস্তুতি যাচাই করার সুযোগ দেয়। কিন্তু অনুরুপ পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজের প্রস্তুতির অবস্থা যাচাই না করেই মূল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
@@@ সংক্ষেপে বলা যায়, “সুপরিকল্পনার সাথে মানসম্মত গাইডবই বা টেক্সটবই অনুসরন করে নিয়মিত ক্লাস ও অনুরুপ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, এএমআইই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনা-টাকে সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়মিতভাবে পড়াশুনা-র মাধ্যমেই আপনি অর্জন করতে পারেন এএমআইই ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি”@@@
যেকোনো সহযোগিতা জন্য ডায়াল করুনঃ +৮৮-০১৯১১-০৮৮৭০৬ (এ এম আই ই হটলাইন) |