A.M.I.E. শিক্ষার্থীরা, নিজেকে উন্নয়নের ইচ্ছা থাকলে কাজে লাগবে এই আর্টিকেল !
কিভাবে সঠিক নিয়মে পড়ালেখা করা যায়?
১. পড়তে বসার আগে একটু চিন্তা করুন- কী পড়বেন, কেন পড়বেন, কতক্ষণ ধরে পড়বেন। প্রত্যেকবার পড়ার আগে কিছু টার্গেট ঠিক করে নিন। যেমন, এত পৃষ্ঠা বা এতগুলো অনুশীলনী।
২. বিষয়ের বৈচিত্র্য রাখুন। নিত্য নতুন পড়ার কৌশল চিন্তা করুন।
৩. এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আগ্রহের একটা সম্পর্ক আছে। এনার্জি যত বেশি মনোযোগ নিবদ্ধ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। আর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর দিনের প্রথমভাগেই এনার্জি বেশি থাকে। তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে পড়াটা দিনে ১ ঘন্টায় পড়তে পারছে সেই একই পড়া পড়তে রাতে দেড় ঘণ্টা লাগছে। তাই কঠিন, বিরক্তিকর ও একঘেয়ে বিষয়গুলো সকালের দিকেই পড়ুন। পছন্দের বিষয়গুলো পড়ুন পরের দিকে। তবে যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ রাতে পড়তে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে সেভাবেই সাজান আপনার রুটিন।
৪. একটানা না পড়ে বিরতি দিয়ে পড়বেন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা ২৫ মিনিটের বেশি একজন মানুষ মনোযোগ দিতে পারে না। তাই একটানা মনোযোগের জন্যে মনের ওপর বল প্রয়োগ না করে প্রতি ৫০ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিটের একটা ছোট্ট বিরতি নিতে পারেন। কিন্তু এ বিরতির সময় টিভি, মোবাইল বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত হবেন না যা হয়তো ৫ মিনিটের নামে দুঘণ্টা নিয়ে নিতে পারে।
৫. মনোযোগের জন্যে আপনি কোন ভঙ্গিতে বসছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। সোজা হয়ে আরামে বসুন। অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া বন্ধ করুন। চেয়ারে এমনভাবে বসুন যাতে পা মেঝেতে লেগে থাকে। টেবিলের দিকে একটু ঝুঁকে বসুন। আপনার চোখ থেকে টেবিলের দূরত্ব অন্তত দু ফুট হওয়া উচিৎ।
৬. পড়তে পড়তে মন যখন উদ্দেশ্যহীনতায় ভেসে বেড়াচ্ছে জোর করে তখন বইয়ের দিকে তাকিয়ে না থেকে দাঁড়িয়ে পড়ুন। তবে রুম ছেড়ে যাবেন না। কয়েকবার এ অভ্যাস করলেই দেখবেন আর অন্যমনস্ক হচ্ছেন না।
৭. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসুন এবং পড়তে বসার আগে কোনো অসমাপ্ত কাজে হাত দেবেন না বা সেটার কথা মনে এলেও পাত্তা দেবেন না। চিন্তাগুলোকে বরং একটা কাগজে লিখে ফেলুন।
৮. টার্গেট মতো পড়া ঠিকঠাক করতে পারলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন, তা যত ছোটই হোক ।
কিভাবে স্মৃতিশক্তির যত্ন নিবেন?
ইতিবাচক চিন্তা করুন: নেতিবাচক চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। সন্দেহবাতিক মন মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। মনের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগটা খুব গভীর। তাই মনের পরিচর্যা করুন। নিজেকে নিয়োজিত রাখুন সৃষ্টিশীল কাজে।
ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করুন: ক্রোধ বা রাগ মন ও মস্তিষ্কের শত্রু। আমরা যখন রেগে যাই তখন শরীরে নিঃসৃত হয় বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ যা আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
মেডিটেশন করুন: নিয়ম করে দিনের কিছু সময় মেডিটেশন করুন। যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। সম্ভব না হলে অন্তত সকাল-সন্ধ্যা খোলা ময়দানে হাঁটুন। এ অভ্যাসগুলো মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। স্মরণশক্তি মূলত নির্ভর করে আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতার ওপর। মেডিটেশন আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায়।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: সারাক্ষণ কাজ আমাদের মস্তিষ্ককে ক্লান্ত করে তোলে। ক্লান্তি মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। প্রতিদিন গড়ে ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুমান। দীর্ঘ কাজের ফাঁকে একটু ব্রেক দিন। কাজে মনোনিবেশ করা সহজ হবে।
পড়া মনে রাখার উপায়ঃ
১. আত্মবিশ্বাস:
আত্মবিশ্বাস যেকোনো কাজে সফল হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত। মনকে বোঝাতে হবে পড়াশোনা অনেক সহজ বিষয় আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে। তাহলে অনেক কঠিন পড়াটাও সহজ মনে হবে। কোনো বিষয়ে ভয় ঢুকে গেলে সেটা মনে রাখা বেশ কঠিন। আর পড়ালেখা করার উত্তম সময় হচ্ছে ভোর। সকালে মস্তিষ্ক ফ্রেশ থাকে।
২. কনসেপ্ট ট্রি
পড়া মনে রাখার ভালো কৌশল হলো ‘কনসেপ্ট ট্রি’। এ পদ্ধতিতে কোনো একটি বিষয়ে শেখার আগে পুরো অধ্যায়টি সাতটি অংশে ভাগ করে প্রতিটি অংশের জন্য এক লাইনে একটি করে সারমর্ম লিখতে হবে। তারপর খাতায় একটি গাছ এঁকে সাতটি সারমর্মকে গাছের একেকটি পাতায় লিখে রাখতে হবে। পাতাগুলোতে প্রতিদিন চোখ বোলালেই অধ্যায়টি সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যাবে। এটি একটি পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক ধারণা। বাংলা ও ভূগোলের জন্য এ কৌশলটি বেশি কার্যকর।
৩. কি ওয়ার্ড
যেকোনো বিষয়ের কঠিন অংশগুলো ছন্দের আকারে খুব সহজে মনে রাখা যায়। যেমন: রংধনুর সাত রং মনে রাখার সহজ কৌশল হলো ‘বেনীআসহকলা’ শব্দটি মনে রাখা। প্রতিটি রঙের প্রথম অক্ষর রয়েছে শব্দটিতে। এমনিভাবে ত্রিকোণমিতির সূত্র মনে রাখতে ‘সাগরে লবণ আছে, কবরে ভূত আছে, ট্যারা লম্বা ভূত’ ছড়াটি মনে রাখা যেতে পারে। এর অর্থ দাঁড়ায়, সাইন=লম্ব/অতিভুজ (সাগরে লবণ আছে), কস=ভূমি/অতিভুজ (কবরে ভূত আছে), ট্যান=লম্ব/ভূমি (ট্যারা লম্বা ভূত)।
৪. কালরেখা
ইতিহাস মনে রাখায় এ কৌশলটি কাজে দেবে। বইয়ের সব অধ্যায় সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা নিয়ে গত ৪০০ বছরের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা বানাতে হবে। সেখান থেকে কে, কখন, কেন উল্লেখযোগ্য ছিলেন, সেটা সাল অনুযায়ী খাতায় লিখতে হবে। প্রতিদিন একবার করে খাতায় চোখ বোলালে খুব সহজে পুরো বই সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হবে। ফলে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। কিন্তু আলাদা আলাদাভাবে ইতিহাস মনে রাখাটা কষ্টকরই বটে!
৫. উচ্চঃস্বরে পড়া
পড়া মুখস্থ করার সময় উচ্চঃস্বরে পড়তে হবে। এই পদ্ধতিতে কথাগুলো কানে প্রতিফলিত হওয়ার কারণে সহজে আয়ত্ত করা যায়। শব্দহীনভাবে পড়ালেখা করলে একসময় পড়ার গতি কমে গিয়ে শেখার আগ্রহ হারিয়ে যায়। আর আগ্রহ না থাকলে পড়া শেখার কিছুক্ষণ পরই তা মস্তিষ্ক থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। শেখা হয়ে যাওয়ার পর বারবার সেটার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। এটাও পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে।
৬. নিজের পড়া নিজের মতো
ক্লাসে মনোযোগী হতে হবে। স্যারদের লেকচার ও পাঠ্যবইয়ের সাহায্য নিয়ে নিজে নিজে নোট করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একটি প্রশ্নের উত্তর কয়েকভাবে লেখার চর্চা করতে হবে। নিজের তৈরি করা পড়া নিজের কাছে অনেক সহজ মনে হবে। পরবর্তী সময়ে নিজের লেখাটি দু-একবার পড়লে অনায়াসেই সেটি আয়ত্ত হয়ে যাবে এবং নিজের মতো করে লেখা যাবে। আর এভাবে পড়লে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে।
৭. নতুন-পুরনোর সংমিশ্রণ
নতুন কিছু শেখার সময় একই রকম আরো বিষয় মিলিয়ে নিতে হবে। কারণ একেবারে নতুন কোনো তথ্য ধারণ করতে মস্তিষ্কের বেগ পেতে হয়। কিন্তু পুরনো তথ্যের সঙ্গে নতুন তথ্য সংযোজন করতে পারে খুব সহজে। উদাহরণস্বরূপ, ‘সিডি’ শব্দটি শেখার ক্ষেত্রে পুরনো দিনের কলের গানের কথা মনে রাখলে শব্দটা সহজেই মনে থাকবে। শুধু মনে রাখতে হবে, শব্দ দুটোর মধ্যে পার্থক্যটা কী। ফিজিক্সের নতুন কোনো সূত্র শেখার সময় মনে করে দেখতে হবে, এ ধরনের সূত্র আগে পড়া কোনো সূত্রের সঙ্গে মেলে কি না।
৮. কেন-র উত্তর খোঁজা
এ নিয়মটা প্রধানত বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রদের জন্য প্রযোজ্য। তাদের মনে সব সময় নতুন বিষয় জানার আগ্রহ প্রবল হতে হবে। অনুসন্ধানী মন নিয়ে কোনো কিছু শিখতে চাইলে সেটা মনে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর কোনো অধ্যায় পড়ার পর সেটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ল্যাবে ব্যবহারিক ক্লাস করতে হবে। তবেই বিজ্ঞানের সূত্র ও সমাধানগুলো সহজে আয়ত্ত করা যাবে।
৯. কল্পনায় ছবি আঁকা
বিষয়সদৃশ একটি ছবি আঁকতে হবে মনে। গল্পের প্রতিটি চরিত্রকে আশপাশের মানুষ বা বস্তুর সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই বিষয়টি নিয়ে পড়তে বসলে মানুষ কিংবা বস্তুটি কল্পনায় চলে আসবে। এ পদ্ধতিতে কোনো কিছু শিখলে সেটা ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। আর মস্তিষ্ককে যত বেশি ব্যবহার করা যায়, তত ধারালো হয় ও পড়া বেশি মনে থাকে।
১০. পড়ার সঙ্গে লেখা
কোনো বিষয় পাঠ করার সঙ্গে সঙ্গে সেটি খাতায় লিখতে হবে। একবার পড়ে কয়েকবার লিখলে সেটা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। পড়া ও লেখা একসঙ্গে হলে সেটা মুখস্থ হবে তাড়াতাড়ি। পরবর্তী সময়ে সেই প্রশ্নটির উত্তর লিখতে গেলে অনায়াসে মনে আসে। এ পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হচ্ছে হাতের লেখা দ্রুত করতে সাহায্য করে। পড়া মনে রাখতে হলে শেখার সঙ্গে সঙ্গে বেশি বেশি লেখার অভ্যাস করতে হবে।
১১. অর্থ জেনে পড়া
ইংরেজি পড়ার আগে শব্দের অর্থটি অবশ্যই জেনে নিতে হবে। ইংরেজি ভাষা শেখার প্রধান শর্ত হলো শব্দের অর্থ জেনে তা বাক্যে প্রয়োগ করা। বুঝে না পড়লে পুরোটাই বিফলে যাবে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে ইংরেজি বানিয়ে লেখার চর্চা করা সব থেকে জরুরি। কারণ পাঠ্যবইয়ের যেকোনো জায়গা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। ইংরেজি শব্দের অর্থভাণ্ডার সমৃদ্ধ হলে কোনো পড়া ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
১২. গল্পের ছলে পড়া
যেকোনো বিষয় ক্লাসে পড়ার পর সেটা আড্ডার সময় বন্ধুদের সঙ্গে গল্পের মতো করে উপস্থাপন করতে হবে। সেখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের মনের ভাবগুলো প্রকাশ করতে পারবে। সবার কথাগুলো একত্র করলে অধ্যায়টি সম্পর্কে ধারণাটা স্বচ্ছ হয়ে যায়। কোনো অধ্যায় খণ্ড খণ্ড করে না শিখে আগে পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতে হবে। পরে শেখার সময় আলাদাভাবে মাথায় নিতে হবে। তাহলে যেকোনো বিষয় একটা গল্পের মতো মনে হবে।
১৩. মুখস্থ বিদ্যাকে ‘না’ বলা
মুখস্থ বিদ্যা চিন্তাশক্তিকে অকেজো করে দেয়, পড়াশোনার আনন্দও মাটি করে দেয়। কোনো কিছু না বুঝে মুখস্থ করলে সেটা বেশিদিন স্মৃতিতে ধরে রাখা যায় না। কিন্তু তার মানে এই নয়, সচেতনভাবে কোনো কিছু মুখস্থ করা যাবে না। টুকরো তথ্য, যেমন: সাল, তারিখ, বইয়ের নাম, ব্যক্তির নাম ইত্যাদি মনে রাখতে হবে। কী মনে রাখছেন, এর সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের কী সম্পর্ক তা খুঁজে বের করতে হবে। এ ছাড়া বিজ্ঞানের কোনো সূত্র কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আয়ত্ত করতে সেটা আগে বুঝে তারপর মুখস্থ করতে হবে.
পড়া মনে রাখার টিপস্:
অনেক সহজে সবকিছু মনে রাখার ইচ্ছে আমাদের সবারই আছে । কিন্তু জানিনা কিভাবে তা সম্ভব । আসুন, জেনে নিই ।
আমাদের মস্তিস্ক এক বিচিত্র তথা জটিল কারখানা । এবং এর কাজ করার ক্ষমতা অপরিসীম । একে কাজে লাগাতে হ'লে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে । খুব সহজ; তবে নিয়মিত চর্চার প্রয়োজন রয়েছে ।
আমরা আমাদের মস্তিস্কের অতি সামান্য অংশই মাত্র ব্যবহার করে থাকি । শতকরা হিসেবে মাত্র ৫% থেকে ৭% । বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানী তথা মেধাবী ব্যক্তিগণ সর্বোচ্চ ১৫% থেকে ১৮% মস্তিস্ককে কাজে লাগাতে পেরেছেন । বাকি বিশাল অংশ অলস বসে থাকে । এই বিশাল অলস মস্তিস্ককে কাজে লাগাতে পারলে মানুষ কি অসাধ্যই না সাধন করতে পারবে; একবার ভেবে দেখুন ।
যাক, এবার আসল কথায় আসি ।
মনে রাখার টিপস্----
১) নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন । সহজ কথায়, "আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে" ।
২) এখনই কাজ শুরু করুন, এখনই ।
৩) ঘুমের সময় নির্ধারণ করতে হবে । এবং তা করতে হবে আপনার "বায়োলজিক্যাল ক্লক" অনুযায়ী । নিয়মিত ও যথেস্ট ।
৪) সকাল হচ্ছে উত্তম সময় পড়ালেখা মনে রাখার । আরও অধিক উত্তম সময় হচ্ছে, সূর্যোদয়ের এক ঘন্টা পূর্বে ।
৫) প্রথমে শব্দ করে পড়তে হবে । এরপর ইচ্ছে হ'লে শব্দহীন ভাবে পড়তে পারেন ।
৬) প্রথমে সম্পূর্ণ বিষয়টি একবার/দু'বার মনযোগ সহকারে পড়ে তারপর দু'তিন লাইন করে মুখস্ত করুন ।
৭) একটানা অনেকক্ষণ পড়তে হ'লে মাঝখানে বিরতি দেয়া উত্তম । এক কিংবা দু'ঘন্টা পর পর অন্ততঃ পাঁচ মিনিট বিরতি দিতে হবে । এ সময় একটা গান শুনতে পারেন কিংবা সটান শুয়ে পড়তে পারেন ।আর যদি আপনি ধর্মে বিশ্বাসী হন তাহলে আপনার ধর্ম নিয়ে ভাবুন এবং মুসলমান হলে আল্লাহর "জিকির" করুন ।
৮) পছন্দের তালিকায় মিস্টি জাতীয় খাবার রাখুন । চিনির শরবত, সাথে লেবু । কিংবা শুধু লেবুর শরবত । গ্লুকোজ পানিও পান করতে পরেন । সাবধান ! ডায়াবেটিক থাকলে অবশ্যই এসব পরিহার করুন । "স্যালাইন" কখনোই খাবেন না । খাবার তালিকায় সবুজ শাকসব্জি, ফলফলাদি রাখুন । স্বাভাবিক পুস্টিকর খাবার খেতে চেস্টা করুন । ধূমপান পরিহার করুন ।
৯) অল্প হলেও প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়ুন ।
১০) কম হলেও প্রতিদিন অন্ততঃ ৩০ মিনিট হালকা শরীরচর্চা করুন ।
১১) প্রতিদিন অন্ততঃ ৫/৭ মিনিট মন খুলে হাসুন ।
১২) অযথা কথা পরিহার করুন ।
১৩) অতিরিক্ত রাত করে ঘুমোতে যাবেন না ।
১৪) পড়াতে মন না বসলেও প্রথম প্রথম অনিচ্ছা সত্ত্বেও পড়তে বসুন ।
একমাস চেস্টা করে দেখুন । কাজে না আসলে ঐ একমাসের পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখুন কোথাও কোন প্রকার ফাঁকি আছে কিনা ? নিজকে ফাঁকি দেবেন না
মেমোরি প্রশিক্ষন - কিভাবে সব কিছু মনে রাখবেন
আপনি আপনার চিরুনী কোথায় রেখেছেন খুঁজে পাচ্ছেন না, দরজার চাবি যে বাসায় ঢুকে কোথায় রেখেছেন খুঁজে পাচ্ছেন না, এক রুম থেকে আরেক রুমে এসেছেন কিছু নেবার জন্য কিন্তু কি নেবার জন্য এসেছেন আর মনে নাই.. এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি আমরা প্রায়শই হয়ে থাকি।কেউ কেউ বলে থাকেন আমার মেধা কম, যা পড়ি সব ভুলে যাই, তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ জানাতে চাই। হ্য়তো অনেকের অভ্যাস, পরিবেশ, প্রতিবেশ, অধ্যবসায়, মনোযোগ প্রভৃতি কারনে মুখস্ত করার প্রবণতা বেশি।
কোন কিছু মুখস্ত করা বা মস্তিস্কে কপি/ পেষ্ট করার জন্য যে পূর্বশর্ত রয়েছে তা হল মনোযোগ কোন কিছু মনে রাখতে গেলে অবশ্যই তার প্রতি আপনাকে মনোযোগী হতে হবে। আর আপনার মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই আপনাকে অনুশীলন করতে হবে।আজ আপনাদের জন্য একটি ট্রেইনিং উপস্থাপন করব-কিভাবে সব কিছু মনে রাখবেন
ব্রেইন আমাদের সবারই আছে, কিন্তু সমস্যা হলো আমরা সবাই এ জিনিসটার ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত নই, আমাদের মস্তিস্ক আমাদের জন্য অসীম তথ্য ধারনের ক্ষমতা রাখে এবং ধারন করে, আমরা এর খুব ক্ষুদ্র অংশ্যই সঠিক কাজে ব্যাবহার করি।মানুষের সফলতার একটাই গোপন রহস্য সেটা হলো 'সচেতনতার সাথে কঠোর অনুশীলন' আমরা বীজ রোপন ছাড়া গাছের আশা করতে পারি না, আগাছা আশা করতে পারি।
মার্ক টোয়েন বলেছিলেন "সবাই কেবল কপালের দোষ দেয়, কেউ এটার পরিবর্তনে কিছু করে না" আসলে আমরা অনেকে হয়তো মস্তিস্কের সঠিক ব্যাবহার করতে চাই.. কিন্তু উপায় জানি না।আসুন ভুমিকা ছেড়ে শুরু করি...
আচ্ছা বলুন তো ট্রাফিক সিগনালের সবচেয়ে উপরে কোন লাইট টি থাকে? সবুজ নাকি লাল? মনে করুন আপনি একটি কুইজ প্রতিযোগিতায় বসে আছেন এবং আপনাকে সঠিক উত্তরটিই দিতে হবে - লাল নাকি সবুজ? জানি, খুব কমই আপনারা উত্তরটি সঠিক ভাবে দিতে পারবেন।আমরা সবসময় রাস্তার সিগনাল গুলো দেখি কিন্তু এখানেও যে ব্যাপার কাজ করে সেটা হলো মনোযোগ আমরা আসলে সব কিছু দেখি কিন্তু লক্ষ্য করি না।ট্রাফিক সিগনালে লাল সবসময় উপরে থাকে এবং সবুজ থাকে সবার নিচে..আর হলুদ বলার অপেক্ষা রাখেনা মাঝখানে থাকে।আরেকটা প্রশ্ন : আচ্ছা বলুন তো আমাদের দশ টাকার নোটে কোন কোন স্থাপনার ছবি আছে যেকোন একটা বলতে পারলে আপনি পাশ।আমরা দশ টাকার নোট সব সময় ব্যাবহার করি কিন্তু লক্ষ্য করি না যে আসলে কি কি আছে এতে।দশ টাকার নোটে একপাশে থাকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ, অপর পাশে জাতীয় সংসদ ভবন।
আসুন দেখি ব্রেন কিভাবে ঘটনা/স্মৃতি সংরক্ষন করে আমাদের ব্রেন আমাদের চোখে যা স্বাভাবিক সে রকম কিছু ধারন করলেও পর্যাপ্ত গুরুত্ব না পেলে মুছে দেয়। সাধারনত অস্বাভাবিক কিছু ব্রেনকে বেশি আলোড়িত করে এবং তা স্থায়ী সংরক্ষন সম্ভব হয়। আপনি আপনার ছোট বেলার কোন একটা দুর্ঘটনা,মজার, অথবা মধুর স্মৃতির কথা ভাবুন দেখবেন আপনার চোখের সামনে পরিস্কার ভেসে উঠছে সেই ঘটনা, কিন্তু আপনি যদি কাল দুপুরে কি দিয়ে ভাত খেলেন মনে করতে চান হোচট খেতে হবে কারন এটা একটা একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
একারনেই আমরা কোন কিছু চাবি,চিরুনী ইত্যাদি খুঁজে মরি কারন আমরা যখন এগুলো নিয়ে কাজ করি তখন এগুলোর দিকে গুরুত্ব দিই না।আপনার ব্রেনকে একটু টাইট দিলেই (প্রশিক্ষন) দিলেই সব মনে করতে পারবেন যে কোন কবিতা, নোট, আর্টিকেল হুবহু বলে দিতে পারবেন এমন কি অংকের ক্যালকুলেশন আপনি ক্যালকুলেটরের থেকে দ্রুত করতে পারবেন। মনে কইরেন না এই পুষ্ট পরার সাথে সাথেই সব পারবেন। আপনাকে প্রচুর সচেতনতার সাথে অনুশীলন করতে হবে। একটি প্রশিক্ষিত ব্রেন কোন কিছু ভোলে না। আপনাকে যেটা করতে হবে আপনার ব্রেনের উপর আপনাকে আস্থা রাখতে হবে। তাহলেই প্রয়োজনে সে সাড়া দেবেই।
মনোযোগ দিয়ে তো সব কিছু মস্তিস্কে ঢুকানো হলো এখন তা প্রয়োজনে বের করব কেমন করে?যারা প্রোগামার তারা কোন একটি মডুইউল ফাংশনকে যেভাবে কল করে ব্রেন থেকে তথ্য অনেকটা সেভাবে আমরা কল করব।ননটেকীদের বলছি আপনি একটি ড্রয়ারে যদি লেবেল দিয়ে ফাইল সাজিয়ে রাখেন তাহলে লেবেল দেখেই আপনি প্রয়োজনীয় ফাইল টি বের করতে পারবেন।আমরা আমাদের ব্রেন থেকে অনেকটা সেভাবেই তথ্য বের করব।প্রথম অধ্যায়ে যাবার আগে,অনুশীলন -১এখানে ১৫ টি বিভিন্ন জিনিসের নাম দেয়া আছে- আপনারা মুখস্ত করার চেষ্টা করুন-বই, অ্যাসট্রে,গরু, জামা, দিয়াশলাই, শেভিং রেজর, আপেল, মানি ব্যাগ, কড়াই, ঘড়ি, চশমা, দরজার নব, বোতল, সোফা,জীবানু।মুখস্ত শেষে একটি কাগজে না দেখে লিখুন এবং অবশ্যই যেভাবে সাজানো আছে সেভাবে, দেখুন তো কয়টি উত্তর সঠিক হয়েছে, প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ২ নম্বর, ৩০ এর মধ্যে কত পেলেন দেখুন।বিঃদ্রঃ লেসনের কোন অংশ স্কিপ না করার জন্য অনুরোধ করছি।
প্রথম অধ্যায় - লিংক সিস্টেম বা গিট্টু পদ্ধতি"
একজন মানুষের আসল সম্পদ হলো তার স্মৃতি শক্তি, যার থাকার কারনে সে অনেক ধনী, না থাকার কারনে সে গরীব" -- আলেক্সান্ডার স্মিথলিংক মানে হলো সংযোগ সাধন।আপনারা এখন থেকে সব কিছু এমন ভাবে মুখস্ত করতে পারবেন যা আগে সম্ভব হয়নি। কারন আপনার মস্তিস্ক প্রশিক্ষিত হতে যাচ্ছে।আসল মুখস্তকরনের আগে আমাকে যে কথা বলতেই হচ্ছে তা হলো- একটি প্রশিক্ষিত মস্তিস্ক সব কিছু ধারন করবে মানসিক ছবি ধারনকে কেন্দ্র করে। আর আপনি কোন কিছু মুখস্ত করার আগে যদি অস্বাভাবিক ছবি কল্পনা করেন সেটা হতে পারে হাস্যকর অথবা ভাংচুর টাইপের, হরর যা খুশি কিন্তু শর্ত হলো স্বাভাবিক হইতে পারবে না। আমি আপনাদের হাস্যকর কল্পনা করে দেখাবো।স্বাভাবিক ভাবে হাত দিয়া খাইলে কল্পনায় খাইতে হবে পা দিয়া এই টাইপের। আপনি যদি এ কাজটি অর্থাৎ কল্পনা ঠিক মতো করতে পারেন তাইলে আপনার ৫০% মুখস্ত কমপ্লিট।এখন কাজ হলো খালি লিংক বা সংযোগ করা- উপরের অনুশীলনী ১ থেকে আমি দেখিয়ে দিচ্ছি -বই, অ্যাসট্রে,গরু, জামা, দিয়াশলাই, শেভিং রেজর, আপেল, মানি ব্যাগ, কড়াই, ঘড়ি, চশমা, দরজার নব, বোতল, সোফা,জীবানু।প্রথমে আছে 'বই' মনে মনে একটা বইয়ের ছবি কল্পনা করুন শুধু 'বই' শব্দটার দিকে খেয়াল দিবেন না বইয়ের ছবি কল্পনার দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিন হতে পারে এটা আপনার কোনো পছন্দের বই, তবে যা কল্পনা করবেন অবশ্যই অনেক বড় করে অস্বাভাবিক করে কল্পনা করবেন যেমন চারতলা বাড়ি সমান বই।এখন পড়ের শব্দ হলো অ্যাসট্রে এখন আপনার কাজ হলো বইয়ের সাথে অ্যাসট্রের সংযোগ ঘটানো কল্পনা করুন চারতলা সমান বইয়ের প্রতি পাতায় হাজার হাজার অ্যাসট্রে তা দিয়া খালি কলের চিমনির মত ধুয়া উড়তেছে। যা কল্পনা করবেন অবশ্যই বেশি বেশি।যদিও আমার লেখা অনেক আপনার কল্পনা করতে লাগবে এক সেকেন্ডের শত ভাগের এক ভাগ সময়েতার পরের শব্দ গরু, এখন আপনাকে গরুর সাথে অ্যাসট্রের সংযোগ করতে হবে,কল্পনা করুন একটি হাতির সমান গরু চুরুট খেয়ে অ্যাস ফেলছে অ্যাসট্রেতে।গরুর পরে জামা- কল্পনা করুন একটি হাতির সমান গরু, রঙচঙা জামা গায়ে দাত কেলিয়ে ফটোসেশন করছে..জামার পরে দিয়াশলাই- কল্পনা করুন একটা ইয়া বড় দিয়াশলাইয়ের বাক্সে হাজার হাজার জামা রাখা আছে..দিয়াশলাইয়ের পরে শেভিং রেজর, শেভিং রেজরের পরে আপেল, আপেলের পরে মানি ব্যাগ, ........ জীবানু আপনি আপনার নিজের মত করে কল্পনা করুন।মনে রাখবেন যাই কল্পনা করুন না কেন তা যেন অনেক বড় বা বেশি এবং অস্বাভাবিক হয়মুখস্ত শেষে যখন মনে করবেন তখন যে সমস্যা হয় তা হল প্রথম শব্দ কি ছিল আর প্রথম শব্দ মনে থাকলেও লিষ্ট কখন শেষ হইলো এইটা বুঝা যায় না।প্রথম যে শব্দ তার সাথে আপনার সাথে গিট্টু লাগাই দিবেন তাইলেই হয়া গেলো।এইবার লাষ্টের জীবানুর সাথে ফাষ্টের বইয়ের গিট্টু লাগাই দেন, তাইলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার লিষ্ট শেষ হইছে।(আকাশ_পাগলার প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে)এইটা যেহেতু গিট্টু পদ্ধতি, তাই আপনাকে ৪/৫ এরকম সিরিয়াল মনে রাখতে হবে না, আপনি যেটা করবেন তা হলো খালি একটার পর একটা গিট্টু লাগাবেন, আসেন বিস্তারিত দেখাই...
প্রথমে আছে বই আপনি বইয়ের সাথে আপনার নিজের গিট্টু লাগান, বই এর পর অ্যাসট্রে, এর সাথে বই এর গিট্টু লাগান, তারপর গরু, এর সাথে অ্যাসট্রের গিট্টু লাগেন বইকে নিয়া আর কল্পনার দরকার নাই, গরুর পর জামা, শুধু জামা আর গরুতে গিট্টু লাগান, তারপর দিয়াশলাই,তারপর শেভিং রেজর,,,,,,,,,জীবানু থাকে শেষে এর সাথে আবার প্রথমের বইয়ের গিট্টু লাগান। এভাবে যে শব্দটা নতুন ঠিক তার আগের শব্দটার সাথে গিট্টু লাগাবেন।মনে করার সময়, এমন হতে পারে যে প্রথমে কি ছিল আপনি ভুইলা গেছেন তাইলে আপনি আপনার নিজের কথা মনে করেন দেখবেন বইয়ের কথা মনে পড়ছে, এবার বইয়ের কথা চিন্তা করেন, অ্যাসট্রে মনে পড়ে গেল, অ্যাসট্রের কথা চিন্তা করতে গেলেই গরু আসল কিনা কন? গরুর পর আসল জামা, এই তো শুরু হয়া গেল বায়োস্কোপের খেলা...
জামার পরে এই তো আইল দিয়াশলাই, আইল আইল আইয়া পড়ল শেভিং রেজর, তারপরেতে দেখা গেল একটি আপেল....চইলা আসল এক গাদা জীবানু, তারপরেতে? তারপরেতে আসল গিয়া বই, -বই? বইতো প্রথমেই দেখছি B:-) ।তারমাইনে আপনার লিষ্ট শেষ The End.সব শেষে সিরিয়ালি শব্দগুলান একটা কাগজে মুখস্ত লিখে ফেলেন, দেখেন তো এইবার ৩০ এ কত পাইছেন (২৮ এর নিচে পাইলে ফেল)
সূত্রঃ "মেডিকেল জার্ণাল" এবং প্রবন্ধ । |